Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
নাম: সন্ধ্যা তপ্ন
ডাউনলোড

 

সাফল্যের ইতি কথা

»»  আমার নাম সন্ধ্যা তপ্ন, নওগঁা জেলার ধামইরহাট উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের বেগুনবাড়ি নানাইচ গ্রামের বাসিন্দা। আমার জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। পরিবারটা ছিল যৌথ পরিবার। সে সময়ে যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠার মজাই আলাদা। অভাব অনটনে ছোট খাটো ঝগড়া বিবাদ জীবনের এক বড় সঙ্গী। এই সমসত্ম একটা সময় আমার বেড়ে উঠার পেছনে শত্রম্ন হয়ে দাড়ায়। কথায় বলে ‘‘যায় দিন ভালো তো আসে দিন খারাপ’’ ভালো সময় গুলো মনে হয় বেশি দিন থাকে না।

»»   আমি যখন স্কুলে পা রাখি তখন আমার স্কুলের প্রধান শিÿক ছিলেন আমার বাবা। বাবাকে আমি আমার জ্ঞানে কখনো আমার ব্যক্তিগত জীবনে এক করতে পারেনি। কারণ এই শর্তে বলছি ‘‘তিনি স্কুলে এক শিÿার্থী এবং পরিবারে এক জন বাবা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতেন । জন্ম সূত্রে পরিবার হচ্ছে শিÿার প্রান কেন্দ্র। সেখানে মা হচ্ছেন শিÿÿকা। আমার সৌভাগ্য আমার শিÿা প্রতিষ্ঠানে বাবা ও মাকে অর্থ্যাৎ দুজনকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিÿক হিসেবে পেয়েছিলাম । পরবর্তী সময়ে বাবা শিÿা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে একটা এনজিও তে যোগদান করেন। সেখানে জেলা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতেন।

»»  যৌথ পরিবার তার উপর অভাবী সংসার দাদুর সহায় সম্পদ তেমন ছিলনা। যে টুকু ছিল তাও তখন কার সময়ে এক ফসলী আবাদ করা হত। কারণ অনেক সময় সামান্য বন্যায় ফসল গুলো ডুবিয়ে যেত। তাই সংসারটা খুব ভালো চলছিল তা নয়। বাবা-মায়ের মাসিক বেতন যা হাতে পেতেন তাতে দশ/বার জন সদস্যর ভরণ পোষন বা খাওয়ার ব্যয় ভাব পরিচালনা করা সহজ নয়। অনেক সময় পরিবারে ছোট সদস্যদের জন্য বড়রা না খেয়ে রেখে দিতেন। যাতে স্বুল থেকে ফিরে এসে আমরা যেন খালি পেটে না থাকি । যখন হাই স্কুলে পড়তে শুরম্ন করি তখন পায়ে হেটেই স্কুলে যেতে হতো। অবশ্য আমার বড় আপু তার একজন সঙ্গী হিসাবে আমাকে পেয়ে যায়।

»»  সব কিছু ভালোই চলছিল। পড়াশুনা নিয়ে নানা স্বপ্ন ভবিষ্যৎ এ বড় কিছু হবো-একজন ডাক্তার হবো। সেই আশায় পড়াশোনা কঠোর ভাবে চালিয়ে যেতে থাকি। সবার পরামর্শ ও বড়দের উৎসাহ আমাকে অনেক সাহস যুগিয়ে দিত। আমি যখন অষ্টম শ্রেণীর শিÿার্থী সামনে পরীÿা নিয়ে প্রস্ত্ততির সময় সেই পূর্বেই বাবা আমাদের ছেড়ে স্বর্গবাসি হয়ে যান।

»»  মা এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা আর অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরা ও যেন দিশেহারা। হঠাৎ করেই মা বাবার মৃত্যুকে মানতে পারেনি হয়ত সে কঠিন ভাবে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেন। দীর্ঘ সময় বিছানায় পড়ে থাকাতে তাকেও স্কুল থেকে অবসর নিতে হলো। শুরম্ন হলো দূরদিনেরযাত্রা যা কিছু সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা ও আমাদের পড়াশোনার খরচ পরিবারের খরচ সব কিছু সামলাতেই শেষ। কোন প্রকারে স্কুলে ভর্তি তো হলাম । কিন্তু দু‘জনের বই পত্র টিউশন খাতা কলম কেনা যেন মায়ের পÿÿ সম্ভব নয়। এতটাই খারাপ অবস্থা যেখানে একবার চাইলেই বাবা সময় মত দিয়ে দিত । আবার কখনো না চেয়ে ও বাবা বুঝে নিত এই সময় আমাদের এই প্রয়োজন আছে। নবম শ্রেণীতে কিছু সময় বন্ধুদের কাছ থেকে নোট নিয়ে পড়তাম তারা খুব সহযোগীতা করত এজন্য আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। বাবা থাকতে এত অর্থের বা খাওয়া দাওয়ার অভাব অতোটা বুঝতে দেয়নি বা বুঝতে পারেনি। টিউশন পড়ার জন্য চাহিদা থাকলে, পরিবারের অবস্থা দেখে বলতে পারেনি,যদি ও বলেছি পরিবারের অভাবের পরিস্থিতির অবস্থা মায়ের কাছে বর্ণনা শুনতে হতো। নিজের কষ্ট বুকে চেপে ডাক্তার হওয়ার স্বপবকে সামনে রেখে বিজ্ঞান বিভাগে পড়া শুরম্ন। কষ্টে শিষ্ঠে নবম থেকে দশম শ্রেণীতে উঠা। অবশ্য ছাত্রী হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলামনা  সব সময় প্রথম হওয়ার লড়াই। সামনে টেস্ট পরীÿা লিখতে হবে তাই কঠোর পরিশ্রম চাই। তা এমন সময় কেরোসিন থাকত না হারিকেনে কখনো মোমবাতির আশ্রয় অনেক সময় জোসনার আলোয়। নিজের পড়াশোনার স্বপ্ন পূরম্ননের জন্য একটা খাতার পৃষ্ঠাকে দু থেকে তিন বার ব্যবহার করতাম।প্রথম কয়েক বার পেন্সিল দিয়ে লিখে মুছে শেষ বার কলম ব্যবহার করতাম।

»»  আমি রেজাল্ট ভাল করার জন্য প্রাইভেট পড়ব বলে বাড়িতে সবার কাছে আবদার করতাম। আমার কান্না কাটিতে পরিবারে লোককে বাধ্য করেছিলাম। আমার শিÿকেদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করার জন্য। অবশ্য আমার হেড স্যার আমাদের বাড়িতে এসে সরেজমিনে স্কুলের বেতন, প্রাইভেট এর খরচ কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তাতে আমাদের দু‘বোনের খরচ একটু কমে যায়। সে যাই হোক টেষ্ট এ সবার থেকে ফলাফল ভালোই হলো।

»»  নতুন উদ্যমে এসএসসি ফাইনাল এর জন্য প্রস্ত্ততি নিতে শুরম্ন করি। কিন্তু প্রথম ধাপেই ইচ্ছে ডানা ছেঁঠে ফেলা হলো।‘‘হয়ত ভাগ্যের দোষ। আমি যখন রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্র কার্ড হাতে পাই মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। যেখানে আমি বিজ্ঞান বিভগে দু বছর পড়াশোনা করে শেষে মানবিক বিভাগে পরীÿা দিতে হবে। শুধু আমার না এই পরিস্থিতির শিকার হলাম দু শিÿার্থী। তার এসেছিল বিজ্ঞান বিভাগের শিÿার্থী হিসেবে। সে ছিল মানবিক বিভাগের ছাত্রী।

»»  আমি এই নিয়ে হতাশা শিÿকের স্মরণাপন্ন হলাম তাতে সময় শেষ। শিÿকের কাছ থেকে সামত্মনা বানী ছাড়া কিছু পেলাম না। আমার এক প্রিয় শিÿক ছিল বিজ্ঞান বিভাগের রসায়নের শিÿক মো: শহীদুজ্জামান তার কথা না বললেই নয়। তার কাছে আমি কৃত্বজ্ঞ। উপর আলস্নাহ তাকে জান্নাত বাসি করম্নক। তিনি তার প্রাইভেট

 

 

 

শিÿর্থীদের সাথে টিফিন পিরিয়ডে আমার মানবিক বিভাগের বিষয়গুলো পড়িয়ে দিতেন কোন টিউশন ফি ছাড়াই। আমার পরীÿায় তিনি সবসময় খোঁজ খবর এমন কি সেই মহুর্তে এবং এখন ও মনে হয় তিনি একজন আদর্শ শিÿক ও অভিভাবক হিসেবে আমাকে গাইড করেছছিলেন। সকলের সহযোগীতায় ফলাফল ও ভালোই করি। এরপর কলেজ ভর্তি হবো। পড়ার খরচ পাব কোথায়? বাড়ী থেকে পড়ানোর সামর্থ্য নেই। আমি যে স্বপ্ন দেখে ছিলাম তা তো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে গেল। আমার আত্নীয় স্বজনের কাছে আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। এখনো নানা জনের নানা মত। আমাকে ধর্মীয় তত্তব জ্ঞান অজর্নের জন্য বিশেষ এক জায়গায় (মিশনে)পাঠাবে। সবার তাই সিদ্ধামত্ম আমি বাধ্য হয়েই এক প্রকার সেখানে যাই অবশ্য সবই তার ইচ্ছা সেখানে আমি পড়াশুনার সুযোগ পাই। সেখান থেকে এইচ এসসি পড়ার পর গ্রামের বাড়িতে আবার ফিরে আসি। বাড়ীতে এসে বসে থেকে কি করব আবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে যে ভাবেই হোক।

»»  একটা কিছু করার চিমত্মা বিভিন্ন চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি সয়গ্রহ ইত্যাদি । বিএ এবং এমবিএ তো কমপিস্নট করতেই হবে। বিএ ভর্তি হবো অনেকে বলে মেয়ে মানুষ পড়াশোনা করে কি করবে। রান্না করতেই হবে শ^শুর বাড়ি গিয়ে। আমি সে সব উপেÿা করে বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরম্ন করি এবং আবার কলেজে ভর্তি হয়ে যাই। ১ম বর্ষ উঠে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারতাম না কারণ কখন কখন কলেজে যাওয়ার গাড়ী ভাড়া থাকত না। এর মধ্যে বিএ পড়াশোনা অবস্থায় মিশনারী স্কুলে শিÿকতা করার সুযোগ পাই। নিজের লÿ্যকে অর্জন করার জন্য আর সুযোগ হাত ছাড়া করিনি। সেখানে সামান্য বেতন হলেও ভাবলাম অমত্মত কলেজে যাওয়ার সুয়োগ ও পড়াশোনাটা ঠিকমত করতে পারব। এই সময়ও কখনো হারিকেনে তেল থাকেনা। বেশির ভাগ দিনের বেলা পড়তাম । সে যাই হোক যৌথ সংসার ভেঙ্গেগেল। সংসারের হাল ধরতে হলো আমাকে।

»»  আমি যে স্কুলে শিÿকতা করতাম সেখানে সকালে এক ঘন্টা সময় ধরে বাচ্চাদের ফ্রি পড়াতাম ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যমত্ম তাদের উন্নয়নের জন্য তাদের সাথে আমিও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম।সেই অবস্থাতেই আমার পড়ালেখা কমপিস্নট করে ব্র্যাক এনজিওতে যোগ দান করি। তারপর থেকে আমার জীবনে একটু হলেও আলোর সুখ দেখেছি।

»»  আমার এই চাকুরী প্রায় সাত বছর এই কাজের সাথে সংযুক্ত থেকে মায়ের সংসার ও আমার ছোট বোনের পড়াশোনা খরচ বহন করে যাচ্ছি। আমার কাছে সার্থক মনে হয় আমার গ্রাজুয়েট ও চাকুরীর কারণে বোনকে সামনে দু‘বছরের মধ্যে এমবিএ কোর্স, উপর আলস্নাহর অর্থ্যাৎ সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছায় কমপিস্নট করাতে পারব।

 

 

»»  সবই তার ইচ্ছা। জীবনের বড় চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ পর্যমত্ম আসতে পেরেছি তার জন্য যার আড়াল থেকে আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃত্বজ্ঞতা জানাই। হয়ত অনেক কষ্টের কথা কলমের আড়ালে রয়ে গিয়েছে সব কিছু মিলিয়ে এখন খুব ভালো আছি। চাকুরী ÿÿত্রে ও আমি সকলের কাছে প্রিয় মানুষ হিসেবেই পরিচিত।

»»  জীবনের নিভে যাওয়া স্বপ্ন গুলোকে একজন নারী হিসেবে আর পূরণ হবে না বলে চুপ করে নিরবে থাকাটা একেবারেই মানায় না। স্বপ্ন দেখব জেগে থেকে। অন্যকেও দেখাতে উৎসাহিত করব এমন স্বপ্নই বাসত্মবায়ন করতে চাই।

 

নিবেদনে

 

 

নাম: সন্ধ্যা তপ্ন

গ্রাম: নানাইচ বেগুনবাড়ি

ডাকঘর: শল্পী

ইউনিয়ন: জাহানপুর

উপজেলা: ধামইরহাট

জেলা: নওগাঁ।

মোবাইল নম্বর-০১৯১৪-৯৪০৪৫৩

 

 

 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায়ধীন ‘‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’’

 

 
 

 

ক্যাটাগরী: সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী

 

নাম: সন্ধ্যা তপ্ন

পিতা: এলিয়েজার তপ্ন

গ্রাম: নানাইচ, ইউনিয়ন: জাহানপুর

উপজেলা: ধামইরহাট

জেলা: নওগঁা।

 

           
   
     
 

 

 

 

 

 

অর্থ বছর: ২০১৯-২০২০ খ্রি:

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়

ধামইরহাট, নওগঁা।

 

 

এক নজরে

ক্র:নং

বিবরণ

পৃষ্ঠা নং

০১

‘‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’’ এর আওতায় প্রাপ্ত ছকের তথ্যাদি।

 

০২

সন্ধ্যা তপ্ন এর সংগ্রামী জীবন কাহিনী।

 

০৩

সন্ধ্যা তপ্ন এর বাবার জীবন কাহিনী।

 

০৪

সন্ধ্যা তপ্ন এর মা‘র জীবন কাহিনী।

 

০৫

সন্ধ্যা তপ্ন এর বড় বোনের জীবন কাহিনী।

 

০৬

সন্ধ্যা তপ্ন এর ছোট বোনের জীবন কাহিনী।

 

০৭

সন্ধ্যা তপ্ন এর পরিবারের এনআইডি নম্বর।

 

০৮

ব্র্যাক এনজিও এর প্রত্যয়ন পত্র।

 

০৯

ব্র্যাক এনজিও প্রতিষ্ঠানের ছবি।

 

১০

ব্র্যাক এনজিও এর সামনে দাড়িয়ে থাকা ছবি।

 

১১

ব্র্যাক এনজিও এর নিয়োগ পত্র।

 

১২

যে প্রতিষ্ঠানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী বিনামূল্যে ক্লাস নেন।

 

১৩

উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র।

 

১৪

উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পত্র।

 

১৫

ÿুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাগজাদি।

 

১৬

প্রশিÿণের সনদ।

 

১৭

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রমের তথ্য।

 

১৮

পরিদর্শন বহি এর ফটোকপি।

 

১৯

পেপার কাটিং।

 

২০

জাহানপুর চেয়ারম্যান সনদ।

 

২১

সাধারণ জনগণের মতামত।

 

২২

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামত।